তাজুল ইসলাম পলাশ:
আমার জন্য কেঁদেছে মানুষ, কেঁদেছি আমিও নীরবে। আপনাদের অনেক ভালোবাসি। এ জীবন আর ফিরে আসবে ভাবিনী। মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখেছি। মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসা জানতাম না। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে খবর নিয়েছে ভক্তদল। অনেকে মিলাদ পড়িয়েছে। হাসপাতালে নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। মনে হচ্ছিল এই বুঝি পৃথিবীকে বিদায় জানানোর সময় এসেছে। একটি শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হতো। আল্লাহ’র কাছে সবসময় পার্থনা করেছি। দীর্ঘ এক মাস প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করেছি। করোনায় আক্রান্ত হলে শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি কি পরিমাণ যে মানসিক যন্ত্রণায় থাকতে হয় তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। অবশেষে আল্লাহ’র অশেষ দয়ায় আমি এখন সুস্থতার পথে। বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছি।
কথাগুলো বলেছেন করোনাকে জয় করা জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রবি চৌধুরী।
গত জুলাই মাসের ১৭ তারিখ রবি চৌধুরীর শরীরে কোভিট ১৯ শনাক্ত হয়। ওই সময় রবি চৌধুরী তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে বিষয়টি জানিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘করোনা আমাকে ভালোবেসেছে। তাই কারো ফোন রিসিভ করতে পারছি না। কিছু মনে করবেন না। যদি পারেন দোয়া করবেন, দোয়া চাই। দেখা হবে আবার গানে গানে ইনশাআল্লাহ।
চিকিৎসকের পরামর্শে ওইদিন তিনি রাজধানী ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চলছিলো তার চিকিৎসা। অবস্থার অবনতি হলে দু’দিন পর তাকে আইসিও’তে ভর্তি করা হয়। ১৮ দিন তিনি জীবন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করেন। পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে কেবিনে দেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বর্তমানে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন।
বিশ্বজুড়ে এক মহাসংকটের নাম করোনাভাইরাস। ক্ষুদ্র এক অনুজের কাছে পুরো বিশ্বের মানুষ কাবু। বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশগুলো এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এ সংকটে মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঠিক এই সময়টাতে করোনা সচেতনতায় মক্ত ছিলেন রবি চৌধুরী। বারবার ফেইসবুকে এসে মানুষকে পরামর্শ দিয়েছন। লিখে ফেললেন একটি গানও। ‘দেশে দেশে করোনা, ঘরের থেকে বাইর হইও না’ শিরোনামের গানটির সুর-সংগীতের পাশাপাশি এতে কণ্ঠও দিয়েছেন তিনি। নিজের স্টুডিও থেকে গানটি তার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুকে একযোগে প্রকাশ পায়। মুহুর্তের মধ্যে লক্ষ ভিউ। সবার মুখে মুখে হয়ে যায় গানটি।
দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন রবি চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি প্রকাশ করেছেন ‘জাতীয় বেয়াদব’ শিরোনামের একটি গান। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির কথা ও সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। আর সংগীতে ছিলেন অপু রায়হান।
নব্বই দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী। অডিও অ্যালবামের বাইরে চলচ্চিত্রেও তিনি জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছেন। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার ৬৪টি অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। সেলেক্সের ব্যানারে প্রয়াত সংগীত পরিচালক প্লনব ঘোষের সুর ও সংগীতে প্রথম ক্যাসেট প্রেম দাও সফলতার পর আর পেঁছনে ফিরে থাকাতে হয়নি তাকে। ওই ক্যাসেটের আমি আজ জেনি গেছি, বেদনার সবটুকু আমাকে দিয়ে, গান দুটি এখনও শ্রোতাদের মুখে মুখে।
এর পর থেকে একের পর এক সলো এ্যালবাম বের হয় তার। এক নয়নে কান্দো, পাশাপাশি, তুমি দু:খ পাও, আলিঙ্গন, চার নয়নে কান্দো, এক আগুনে জ্বলছি, একজন প্রিয়জন, তোমার নি:শ্বাসে বিষ ছিল, ঘুরাও দু’নয়ন, অন্তর থেকে বলছিসহ আরও শতাধিক মিক্সড এ্যালবামে কন্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। তিনি ৮০ টির মতো দেশ ভ্রমন করেছেন। সবচেয়ে বেশি ভ্রমন করেছেন, আমেরিকা, লন্ডন, দুবাই, মালদ্বীপ, নেপাল, সিংগাপুর, ইতালি, নেদারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সৌদিআরব, কাতার, জার্মান, কানাডা, ব্রাজিল, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া গান করতে গিয়ে ঘটেছিল একটি স্মৃতিময় ঘটনা।
রবি চৌধুরী শুদ্ধ সঙ্গীতের সেবক হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, সংগীত আমার জীবন সংগীত আমার মরণ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গান গেয়েই যাব। আল্লাহ আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। এই জীবনে আপনাদের ভুলবোনা। যারা আমার খবর নিয়েছেন, দূর থেকে দোয়া করছেন, সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সুস্থ হয়ে উঠলে ফেইসবুকের মাধ্যমে সকলের সাথে কথা বলবো। আমার জন্য দোয়া করবেন।
এই শিল্পী চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আন্দোলন’ ও সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’। রিমঝিম স্টুডিও নামে তার একটি স্টুডিও রয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।